ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সীমান্তে নিহত ২ বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে না বিএসএফ

ভোরের মালঞ্চ | অনলাইন ডেস্ক মে ২৬, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম সীমান্তে নিহত ২ বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে না বিএসএফ

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত দুই যুবকের মরদেহ ফেরত আনতে দীর্ঘ সময়েও কোনো অগ্রগতি নেই। মাস পার হলেও মরদেহ ফেরত না দেয়ায় নিহতদের পরিবারে চলছে গভীর শোক ও ক্ষোভ।

 

 

নিহতের পরিবারগুলোর অভিযোগ, বিজিবির কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই মরদেহগুলো দেশে আনা সম্ভব হয়নি।


জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন গোপালপুর গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে ওবাইদুর রহমান। ঢাকায় গাড়িচালক ওবাইদুর সেদিন রাতে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের মধুপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন ওবাইদুর। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। পরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিএসএফ মরদেহ নিয়ে যায়, কিন্তু এতদিনেও তা ফেরত দেয়া হয়নি।


নিহত ওবাইদুরের মা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘ছেলের মরদেহ ফিরে পেলে তাকে দাফন করে অন্তত মনকে বোঝাতে পারতাম যে সে আমার কাছেই আছে। বিজিবির কাছে বারবার গিয়েও কিছু হয়নি।’


এ দিকে গত ৬ এপ্রিল ভারতে প্রবেশ করেন বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিম ও আরও কয়েকজন। হাবাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের ধাওয়া খেলে বাকিরা পালিয়ে গেলেও ওয়াসিম ধরা পড়েন। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইছামতি নদীতে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাংলাদেশি কৃষকরা। পরে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন, মরদেহটি ওয়াসিমের এবং সেটি ভারতের অংশে অবস্থান করছে। বিএসএফ পরে মরদেহটি নিয়ে যায়।


ওয়াসিমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘ছবিতে নিশ্চিত হওয়ার পর বিজিবিকে জানাই। তারা লিখিত অভিযোগ নিলেও কয়েকদিন পর জানায়, আমাদের পক্ষে মরদেহ আনা সম্ভব নয়।’


মা ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘বিজিবি বলছে, পাসপোর্ট-ভিসা করে নিজেরাই ভারতে গিয়ে মরদেহ আনতে হবে। আমরা গরিব মানুষ, লেখাপড়া জানি না-এভাবে কীভাবে মরদেহ আনব?’


মরদেহ ফেরত আনার ব্যাপারে ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘বিএসএফ জানিয়েছে ওয়াসিমের মরদেহটি ভারতের পুলিশের কাছে আছে। তারা তার মরদেহটির ময়নাতদন্ত করেছে।’


ভারতীয় পুলিশের ভাষ্যমতে, মরদেহ নিতে হলে বৈধভাবে ভারতীয় পুলিশের কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ ও শনাক্ত শেষে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এনওসি নিতে হবে। পরে তাদের ফরেনোর রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে যাবতীয় কার্যাদী সম্পন্ন করতে হবে। এই বিষয়গুলো ওই দুই পরিবারকে জানানো হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে; যাতে তারা মরদেহ ফেরত আনতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে।


বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ ফেরত আনার বিষয় জানতে চাইলে বিজিবির অধিনায়ক বলেন, ‘ভারতীয় বিএসএফ’র সঙ্গে অনেকবার পতাকা বৈঠকসহ নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। বিএসএফ জানিয়েছে, বিষয়টা পুরোপুরি ভারতীয় পুলিশ হ্যান্ডেল করছে। তাদের কিছু করার নেই। সেইক্ষেত্রে তারা বলেছে,পরিবারের পক্ষ থেকে বৈধ উপায়ে ভারতে এসে সব কার্যাদী সম্পন্ন করে মরদেহ ফেরত নিতে হবে।’


পরিবারগুলোর মতে, সীমান্তে হত্যা হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরদেহ ফেরত আনার উদ্যোগ ছিল না বললেই চলে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়া নতুন কিছু নয়, তবে মরদেহ ফেরত না পাওয়ার এই ঘটনা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এমন অবস্থায় মরদেহ ফেরত না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের।

Side banner

জাতীয় বিভাগের আরো খবর