লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ডা. ফয়েজ আহমেদ হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত দুইদিন ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিউকিউটর সহকারী এটার্নি জেনারেল মো. সাইমুম রেজা তালুকদার ও তদন্ত কর্মকর্তা আহমেদ নাসির উদ্দিন মোহাম্মদের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্তকারী টিম, নিহতের স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন। পাশাপাশি ডা. ফয়েজ আহমেদকে কিভাবে র্যাব গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে, এসব বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থার কাছে বর্ণনা দেন তারা। পরে ঘটনাস্থল ডা, ফয়েজ আহমদ এর নিজ বাসার ছাঁদ ও আশপাশ এলাকায় পরিদর্শন করেন।
একই সাথে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল মাহমুদ জুয়েলকে যেখানে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। চকবাজার মসজিদের সামনের সড়ক ও জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুকে গুলি করার ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন তদন্তকারী টিম। পাশাপাশি এসব ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হয়েছে, এসব বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনসহ স্থানীয়রা।
শহরের প্রাণকেন্দ্রের উত্তর তেমুহানীতে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. ফয়েজ আহমেদ এর বাসা। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে ডা. ফয়েজ আহমেদ নিজ বাসায় খাওয়া-ধাওয়া, নামাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এর কিছুক্ষন পর লেঃকর্ণেল তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা বাসার চারদিকে ঘিরে ফেলেন। এক পর্যায়ে বাসার গেইট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু ডা. ফয়েজ আহমেদ ঘুমান্ত অবস্থায় টের পেয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। এসময় র্যাব সদস্যরা তাকে ধরে বাসার ছাঁদে নিয়ে যান। ডা. ফয়েজ আহমেদ কেন তাকে উপরের দিকে নিচ্ছিলেন বিষয়টি জানতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন কথাই শুনেনি র্যাব সদস্যরা। পরে বাসার চাঁদে নিয়ে গুলি করে নিচে ফেলে দেন গরীবের খ্যাত বলে জনপ্রিয় চিকিৎসক জামায়াতের এই প্রবীন নেতা ডা. ফয়েজ আহমদকে। আর বাসার কানিসে লুকিয়ে সব কিছু দেখছেন তার ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বেলাল আহমেদ। কিন্তু নিথর দেহ পড়ে থাকলেও র্যাবের ভয়ে কেউ সামনে আসেননি। এরপর ডা. ফয়েজ আহমদের নিথর দেহ সদর হাসাপাতালে নিয়ে যান র্যাব সদস্যরা। ওইরাত হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছিলেন ডা. আনোয়ার হোসেন ও হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছিলেন ডং, জয়নাল আবেদিন। তখন তাদেরকে ডা. ফয়েজ আহমদের মরদেহ বুঝিয়ে নিতে বলে র্যাব। কিন্তু তারা এইভাবে ডা. ফয়েজ আহমদের মরদেহ নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জরুরী বিভাগের সামনে রেখে চলে যান। এরপরের দিন ময়নাতদন্ত শেষ করে লিল্লাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে ডা. ফয়েজ আহমদের জানাযা নামাজ গড়তেও বাধা দেয় র্যাব সদস্যরা। তৎকালীন সরকারের এ অত্যাচার শুধু দেখা ছাড়া আর কোন কথা বলা ছিলনা কারও।
এদিকে সরকার পতনের পর জামায়াত নেতা ডা. ফয়েজ আহমেদ এর ছেলে বেলাল আহমেদ বাদী হয়ে ১৬ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। লেঃকর্ণেল তারেক সাঈদসহ র্যাব ও প্রশাসনের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। ওই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনানের তদন্তকারী দল তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
আপনার মতামত লিখুন :