ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারম্যানের পতিত জমিতে সূর্যমুখীর হাসি

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম চেয়ারম্যানের পতিত জমিতে সূর্যমুখীর হাসি

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমারহ। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকেলে দিক পরিবর্তন করে ধাবিত হয় পশ্চিমে। লক্ষ্মীপুর জেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের পশ্চিম হাসন্দির মুক্তিযোদ্ধা রফিক উল্লাহ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। 


লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাগানটি হওয়ায় মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিনিয়তই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ আবার ছবি কিংবা ভিডিও করছেন। তবে এসবে মোটেও খুশি নন কৃষক। কারন, আগত দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ছিড়ে নিয়ে যান ফুল।


১নং উত্তর হামছাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আরিফুর রহমান। অনাবাদি এই জমি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন তিনি।


জানা যায়, সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুই একবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। সূর্যমুখী গাছ জ¦ালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। 


আরো জানা যায়, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ এই তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এককথায় সূর্যমুখী তেলে মানব দেহের মহাওষুধ হিসাবে ভূমিকা পালন করছে।


দর্শনার্থীরা বলছেন, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছেন। খুব ভালো লাগছে দৃশ্যটি। তবে বাগান নষ্ট ও ফুল ছিড়ে নেওয়ার বিষয়টি কেউ কেউ স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে এমনটি না করার কথা বলছেন তারা।  


কৃষক আরিফুর রহমান জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ অনেক কম। যার ফলে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে এ চাষে। তবে প্রথমবারের মতো চাষাবাদ হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে বাগানে। তাছাড়া আগত দর্শনার্থীরা সৌন্দর্য উপভোগের নামে বাগান নষ্ট ও ফুল ছিড়ে ফেলায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।  


আরো জানান, চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পরামর্শে অনাবাদি জমিটিতে তিনি সূর্যমুখীর চাষবাদ করেন। বাগানে ফলনও ভালো হয়েছে। তাই তিনি অন্যদের সূর্যমুখী চাষাবাদ করার ও দর্শনার্থীদের ফুল এবং বাগান নষ্ট না করার অনুরোধ জানান। 


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালনক ড. মো: জাকির হোসেন বলেন,  সূর্যমুখী তেল খুবই উৎকৃষ্ট মানের ও বহু রোগের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য সরকার এটি চাষাবাদ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন কৃষি বিভাগকে। সে লক্ষ্যে এখানকার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছি। মাঠ কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় জেলায় এবছর ২০৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো।  


আরো বলেন, সূর্যমুখী চাষাবাদে খরচ খুবই কম। তাছাড়া এটি স্থানীয় তেলের ঘানিতে ভাঙানো যায়। সূর্যমুখী চাষাবাদ আগামী বছর আরো বৃদ্ধি করা হবে।     
 

Side banner