ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোনার দুলের লোভে শিশু হত্যা, নারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন মার্চ ২০, ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম সোনার দুলের লোভে শিশু হত্যা, নারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কানের দুল ছিনিয়ে নিতে সাত বছরের শিশু পপি সাহাকে হত্যার দায়ে রুনা আক্তার আঁখি নামে এক নারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। এ সময় আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই মামলায় রুনার স্বামী এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।


রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা ও তার স্বামী এমরান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত রুনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগেও দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারী আরও একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন পেয়েছেন।


দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের এমরানের স্ত্রী। ভিকটিম পপি সাহা উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।


মামলার এজাহার এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি রুনা আক্তার আঁখি এবং তার স্বামী এমরান ঘটনার তিন মাস আগ থেকে রায়পুর উপজেলার সাগরদি গ্রামের ফারুক হওলাদার বাড়ির কাশেম হাওলাদারের একটি ঘর ভাড়া নেন। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটার দিকে রুনা পার্শ্ববর্তী নেপাল সাহার বাড়ির নির্মল সাহার শিশুকন্যা পপি সাহাকে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নেন। এ সময় শিশুর কানে থাকা তিন আনা ওজনের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেন রুনা।


এতে শিশুটি চিৎকার করতে চাইলে রুনা তার মুখ ও গলা চেপে ধরেন। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে তার মৃতদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। ঘটনার পর রুনার স্বামী এমরান হোসেন ঘরে এলে তাকে হত্যার ঘটনাটি জানান। এতে তিনি মরদেহ গুম করার পরিকল্পনা করেন।


এদিকে দীর্ঘ সময় শিশুটির কোনো খোঁজ না পেয়ে বাড়ির লোকজন এবং স্বজনরা তাকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজতে থাকে। ওই বাড়ির এক নারী রুনার ঘরে পপির মৃতদেহটি দেখতে পান। পরে রায়পুর থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং রুনা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে। পরে রুনা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ওইদিনই শিশুটির মা ববিতা রানী সাহা (৩২) রায়পুর থানায় রুনা এবং তার স্বামী এমরানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।


রায়পুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেন। এতে রুনাকে হত্যা দায়ে এবং তার স্বামীকে হত্যার তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।


জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামি রুনাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় এবং তার স্বামী এমরানকে খালাস দিয়েছেন।


রায়ের পর মামলার বাদী ববিতা রানী সাহা বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমার মেয়েকে রুনা গলা টিপে হত্যা করেছে, তার ফাঁসির রায় হলে আরও খুশি হতাম।


এদিকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের রোজিনা আক্তার (১৫) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন রুনা আক্তার আঁখি। ২০২২ সালের ১৮ মে একই আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি রুনা আক্তার আঁখিসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি আমির হোসেন কিশোরী রোজিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করায় এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। হত্যার পর দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা ওই মাদ্রাসাছাত্রীর সঙ্গে থাকা তার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। স্বর্ণের লোভে তিনি দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটিও ঘটান।
 

Side banner