ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়মে ভরা কমলনগর ছাত্রলীগে

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন মার্চ ২৩, ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম অনিয়মে ভরা কমলনগর ছাত্রলীগে

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন। মাদক সংশ্লিষ্টতা, অছাত্র, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান, বিবাহিত, চাঁদাবাজি, হত্যা ও ধর্ষণসহ বিস্তর অভিযোগ। যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।  


স্থানীয় ছাত্রলীগ (একাংশ) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নুর উদ্দিন চৌধুরী রুবেল বিবাহিত। সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ হত্যা মামলার আসামী। কারাভোগও করেছেন ওই মামলায়। ছাত্রলীগের এই ইউনিট’র সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে ছিল দা-কুমড়ো সম্পর্ক। কমিটি ঘোষণার ২ মাসের মাথায় সমন্বয়হীনতা, চাঁদাবাজিসহ তিনটি অভিযোগে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। যদিও এর কিছুদিন পর জেলা ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তাতে কমিটি পুনবহাল হয় রুবেল ও হারুনদের। 


এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে উপজেলা ছাত্রলীগের এই দুই নেতা। টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন। কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান ও অযোগ্যদের মূল্যায়ন। পদ পাওয়া এসব নেতাদের অধিকাংশ মাদক সংশ্লিষ্টতা, চাঁদাবাজি, অছাত্র, প্রবাসী, ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। এর মধ্যে পাটোয়ারী হাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সবুজ হোসেন এক সন্তানের জনক। চর কাদিরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ১ম যুগ্ন আহ্বায়কও বিবাহিত। 


এছাড়া রুবেল ও হারুনের নেতৃত্বাধীন উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুব আলম শিপুল প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে করেছেন কারাভোগ। আরেক সহ-সভাপতি সোহেল উদ্দিন বিবাহিত আর মো. সোহেল প্রবাসী। উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মো. ইয়াসিন চৌধুরী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী। এদের মধ্যে অনেকেই উপজেলা সভাপতি ও সম্পাদককে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।


পাটোয়ারী হাট ইউনিয়নের শাহিন মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি পদে আমি প্রার্থী ছিলাম। এরজন্য উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের দাবীকৃত ১ লাখ টাকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সভাপতি করা হয়নি। আমার চেয়েও কয়েকগুন বেশি টাকা নিয়ে সভাপতি বানিয়েছেন অন্যজনকে। অথচ ওই পদে সে যোগ্য নয়।   


নাম প্রকাশ না করা শর্তে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী বলেন, বিগত জাতীয় ও  স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছিলো, তাদেরকে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রত্যেকটি কমিটিতে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করেছেন।

   
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে ক্লিন ইমেজ এবং  স্বাধীনতার স্বপক্ষের আওয়ামী পরিবার, ত্যাগী কর্মীর মূল্যায়ন পাওয়ার কথা থাকলেও মাদক সংশ্লিষ্ট, মামলার আসামি ও বিএনপি পরিবার দিয়ে কমিটির মহোৎসব। যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। 


অবিলম্বে ওই কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করে যোগ্য কর্মীদের মাধ্যমে নতুন করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হোক। একই সাথে জেলা ছাত্রলীগের কাছে দাবী জানাবো, অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার। 


কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও অভিযুক্ত হারুনুর রশিদ বলেন, টাকা দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়টি সঠিক নয়। কমিটি গঠনে অন্যান্য অভিযোগগুলোর সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলাটিও রাজনৈতিক কারনে হয়েছিলো।   


অভিযোগের বিষয়ে কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নুর উদ্দিন চৌধুরী রুবেল বলেন, বিবাহের বিষয়টি সঠিক নয়। এছাড়া আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর যে সকল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওখানে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের পদ দেওয়া হয়েছে। কোন অনিয়ম করা হয়নি। 


তবে পদবঞ্চিতদের কয়েকজন এখন বিভিন্ন অপপ্রচার ও অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগকে অবহিত করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) বিরোধ নয় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। 


এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শিপুলের বিষয়টি জানার পর তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের মামলাটি রাজনৈতিক। অল্প সময়ের মধ্যে তা মীমাংসা হয়ে যাবে। আর সভাপতি নুর উদ্দিন চৌধুরী রুবেলের বিবাহের এবং অন্য অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ ও সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 
 

Side banner