ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরের চর রমনিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে চুরি

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন মার্চ ২৭, ২০২৪, ০৪:৪৯ পিএম লক্ষ্মীপুরের চর রমনিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে চুরি

লক্ষ্মীপুরের চর রমনিতে বেড়েছে গরু-মহিষ চুরির ঘটনা। প্রায় প্রতিরাতেই বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। নদী ও চরাঞ্চলের দুর্গম পথ ব্যবহার করে খুব সহজে করা হয় চুরি। এদিকে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন গবাদি পশু হারিয়ে নিঃস্ব অনেক দরিদ্র কৃষক। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে গরু-মহিষসহ একাধিক চোর আটক হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূলহোতারা। তাই থামছে না চুরির ঘটনা।


জেলা সদরের এই ইউনিয়নে শুধু গবাদি পশু নয় চুরি হচ্ছে বসতঘরেও। চোরেরদল লুটে নিয়ে যাচ্ছে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল। দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা এসব ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা। তাই বাধ্য হয়ে গ্রুপ ভিত্তিক ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছেন নিজ এলাকা।


স্থানীয়রা জানান, চুরি করা গরু-মহিষ পাচারের জন্য নদী ও নির্জন পথ ব্যবহার করে থাকে চোর চক্রের সদস্যরা। গরু চুরি করে প্রথমে লুকানো হয় চরের মধ্যে। পরে সুযোগ বুঝে ট্রলারে কিংবা পিকআপে করে পাচার করা হয় অন্য জেলায়। কখনো জবাই করে মাংস পাচার করা হয়। অনেকেই জীবিকার একমাত্র অবলম্বন গবাদি পশু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাড়িতে ঢুকে নগদ টাকা ও মূল্যমান মালামাল লুটে নেয় চোরের দল। বাদ যায় না অটোরিকশার ব্যাটারিও। 


ভুক্তভোগী খোকন ও হেলাল বলেন, অনেক আশা ভরসা নিয়ে গরু পালন করেছি। কিন্তু সেই তিনটি গরু গোয়াল থেকে চুরি হয়ে গেছে। যার বাজার মূল্য তিন লাখের বেশি হবে। এছাড়া চোরেরা লুটে নিয়ে বসতঘরের মূল্যমান জিনিসপত্র ও অটোরিকশার ব্যাটারি। দীর্ঘসময়ে চলতে থাকা চুরির এসব ঘটনায় এখন অতিষ্ঠ চর রমনির বাসিন্দারা। তাছাড়া চুরির সঙ্গে বড় বড় সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় কোন প্রতিকার মেলেনা।  এজন্য বাধ্য হয়ে নিজেরা রাত জেগে এলাকা পাহারা দিচ্ছি। 


সিএনজি চালক বেলাল হোসেন বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে আমার সিএনজি চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই গাড়ি ৮ দিন পর চাঁদপুরের কচুয়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিনের ঐকান্তিক চেষ্টায় জীবিকার একমাত্র অবলম্বন সিএনজি ফিরে পেয়েছি। 


স্থানীয় সেলিম মীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চর রমনিতে চুরির ঘটনা ঘটছে। প্রতি রাতে কোন না বাড়িতে চুরি হচ্ছে। আতঙ্কে রাত পার করছে এখানকার মানুষ। সম্প্রতি চুরি ঠেকাতে পুলিশও খুব তৎপর। পূর্বের চেয়ে রাতে বেড়েছে চর রমনিতে তাদের নজরদারি। এছাড়া এলাকাবাসী গ্রুপ ভিত্তিক ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছেন। 


চর রমনির ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কামরুল সরকার বলেন, চুরি রোধে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়দের নিয়ে রাতে পাহারা দেওয়া হয়। অন্যদিকে পূর্বের চেয়ে কয়েকগুন বেশি তৎপর রয়েছেন ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিন। কিছুদিন পূর্বে চুরি হওয়া একটি সিএনজি তিনি উদ্ধার করেছেন। গ্রেফতার করেন চোর চক্রের নেতা বশির মোল্লার ছেলে সাইজ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী মো. সুমনকে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া ও পলাতক থাকায় সাইজ উদ্দিনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। 


সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিন বলেন, চুরি রোধ ও চোরদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে দিন-রাতে। ইতোমধ্যে চুরি হওয়া কিছু মালামাল ও চোর চক্রের একজনকে গ্রেফতার করেছি। তবে আমাদের অগোচরে এখনো কিছু জায়গা চুরি ঘটনা ঘটছে। এজন্য এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
 

Side banner