ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘অস্থায়ী কবরস্থানে’ বিমান হামলা ইসরায়েলের

ভোরের মালঞ্চ | অনলাইন ডেস্ক মার্চ ৪, ২০২৪, ০৩:১১ পিএম গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘অস্থায়ী কবরস্থানে’ বিমান হামলা ইসরায়েলের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের একটি ‘অস্থায়ী কবরস্থানে’ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ভূখণ্ডটির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা এই কবরস্থানটি তৈরি করেছিলেন। 

 

হামলার পর ইসরায়েলি হামলায় নিহত অনেকের মরদেহ কবর থেকে বেরিয়ে আসে। সোমবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের নির্মিত একটি ‘অস্থায়ী কবরস্থানে’ রোববার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বর্বরোচিত এই হামলার ফলে সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ কবর থেকে বেরিয়ে পড়ে।

 

উত্তর গাজা উপত্যকার সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আহমেদ আল-কাহলোত আনাদোলুকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি গণকবরে বোমাবর্ষণ করেছে যেখানে কয়েকশ শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছিল। ইসরায়েলি হামলায় নিহত এসব মানুষকে সম্প্রতি সমাহিত করা হয়েছিল।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘বোমা হামলার ফলে কবরস্থান ধ্বংস হয়ে যায় এবং এতে করে মাটির নিচ থেকে অনেক মৃতদেহ প্রকাশ্যে চলে আসে।’

 

অবশ্য বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো বাইরে চলে আসা মৃতদেহগুলোকে পুনরায় সমাধিস্থ করার জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে বলেও আল-কাহলোত উল্লেখ করেছেন।

 

আনাদোলু বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের সকল গভর্নরেটের বাসিন্দারা আবাসিক এলাকা, বাড়ির আঙিনা এবং খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী যৌথ এবং পৃথক কবর স্থাপনের পথ অবলম্বন করেছে।

 

বেসামরিক লোকদের ওপর ঘন ঘন হামলা করা ছাড়াও রাস্তা বন্ধ রাখা এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে নিয়মিত কবরস্থানে প্রবেশ করা অসম্ভব বলে অস্থায়ী এসব কবরস্থানে লাশ দাফন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা।

 

এছাড়া যুদ্ধের শুরু থেকেই সামরিক যানবাহন প্রবেশ করতে পারে এমন এলাকায় কবর খনন এবং সেগুলোতে হামলা করেই চলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

 

এর আগে গত জানুয়ারি মাসের শেষে দিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ১৬ টি কবরস্থন ধ্বংস করে দিয়েছে। মূলত উপগ্রহ চিত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া ফুটেজের বরাত দিয়ে সেসময় এই তথ্য সামনে আনে সংবাদমাধ্যমটি।

 

সিএনএন আরও জানায়, গাজায় স্থল অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুলডোজার ব্যবহার করে কবরস্থানগুলো ভেঙে দিয়েছে এবং এমনকি এতে করে কবর থেকে কিছু মৃতদেহও বের হয়ে গেছে।

 

সিএনএনের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত আইন বিশেষজ্ঞরা সেসময় জোর দিয়ে বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কবরস্থানের মতো স্থানগুলোকে ধ্বংস করা এবং এগুলোকে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইসরায়েলের এই ধরনের কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

 

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৪১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭১ হাজার ৭০০ জন।

 

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

 

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।

Side banner