ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শিপিং রুট

ভোরের মালঞ্চ | অনলাইন ডেস্ক মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শিপিং রুট

বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের সিংহভাগ মালামাল পরিবহন হয়ে থাকে সমুদ্রপথে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধমনীও বলা যায় শিপিং রুটগুলোকে। এসব পথের যেকোনও ধরনের বিপর্যয় কিংবা হুমকি বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যে কারণে অনেক দেশ বৈশ্বিক শিপিং রুটগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করে। এর গুরুত্ব এত বেশি যে, তেল পরিবহন হুমকির মুখে পড়ার সাথে সাথে ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশাল অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে।

 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেন-ভিত্তিক হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজে হামলা ও ছিনতাই করছে। হুথিদের ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে ওই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

ইউরোপের উত্তরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ কৃষ্ণ সাগরের কিছু অংশে জাহাজ চলাচলকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। সামুদ্রিক গোয়েন্দা তথ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কোরি র‌্যান্সলেম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিপিং রুট নিয়ে কথা বলেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তার মতে, বর্তমানে বিপজ্জনক শিপিং রুট কোনগুলো...

 

• লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগর

ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন উপকূলে চলাচলকারী জাহাজ লক্ষ্য করে প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে। হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথটিকে প্রায় পঙ্গু করে ফেলেছে।

 

লোহিত সাগরের উত্তর প্রান্তে সুয়েজ খালের অবস্থান; এর দক্ষিণ প্রান্তে বাব এল-মান্দেব প্রণালী, যা এডেন উপসাগরে মিলেছে। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে এবং তার বাইরে পণ্য পরিবহনের জন্য দিনরাত জাহাজের চলাচলের ব্যস্ত জলপথ এটি।

 

বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধমনীও বলা যায় শিপিং রুটগুলোকে

কিন্তু অনেক বড় শিপিং কোম্পানি হুথিদের হামলার কারণে ওই অঞ্চলে ট্রানজিট স্থগিত করেছে। তারা জাহাজগুলোকে দক্ষিণ আফ্রিকার আশপাশের জলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আশপাশের জলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এতে সময়ও বেশি লাগে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর হুথিদের প্রথম হামলার পর থেকে দুই হাজারেরও বেশি জাহাজ তাদের সমুদ্রযাত্রা অন্যপথে নিতে বাধ্য হয়েছে।

 

যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই হুথিদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা করছে। এই হামলায় ইয়েমেনে হুথিদের কয়েক ডজন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। যা ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

• মেক্সিকো উপসাগর

মধ্যপ্রাচ্য থেকে দূরে মেক্সিকো উপসাগরের ক্যাম্পেচে উপকূলে মেক্সিকোর অফশোর তেল স্থাপনাগুলো অবস্থিত। এই উপসাগরটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল; যেখানে শেল, বিপি, শেভরন এবং এক্সন মবিলসহ বিশ্বে প্রভাবশালী বিভিন্ন জায়ান্ট কোম্পানির উপস্থিতি রয়েছে।

 

চরম বৈরী আবহাওয়া ওই অঞ্চলের তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ হুমকিগুলোর একটি। তবে ওই অঞ্চলে সবচেয়ে ঝুঁকি হারিকেন।

 

তবে মেক্সিকোর চোরাকারকারীরা উপসাগরে জ্বালানি পাচারের সাথে জড়িত এবং গত বছরের মার্চে উপসাগরে অন্তত ছয়টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

 

• মালাক্কা প্রণালী

মালাক্কা প্রণালী পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ততম জলপথ। মধ্যপ্রাচ্য, জাপানি বন্দর এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশের বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি তেল ট্যাঙ্কারগুলোর জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট মালাক্কা প্রণালী।

 

২০২১ সালে এশিয়ায় জলদস্যুতা আর ডাকাতির সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে ওই অঞ্চলে। তবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের সমন্বিত টহল ও জাহাজের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করায় জলদস্যুদের হানা কিছুটা কমেছে।

 

অনেক দেশ বৈশ্বিক শিপিং রুটগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করে

কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে একটি বাল্ক ক্যারিয়ারে জলদস্যুদের হামলায় একজন ক্রু সদস্য আহত হয়েছিলেন।

 

• সিঙ্গাপুর প্রণালী

পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালী আর পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝের ৭০ মাইল দীর্ঘ ও ১২ মাইল প্রশস্ত করিডোর হলো সিঙ্গাপুর প্রণালী। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) তথ্য অনুযায়ী, এই প্রণালীটি উদ্বেগজনক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। কারণ সেখানে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে।

 

সিঙ্গাপুর প্রণালীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা কম ঘটলেও প্রায়ই কিছু অপরাধমূলক তৎপরতা দেখা যায়। ২০২২ সালে এই প্রণালীতে অন্তত ৩৮টি দুর্ঘটনার রেকর্ড করা হলেও পরের বছর তা কমে ৩৭ হয়েছে।

 

• ভেনেজুয়েলা এবং গায়ানার মধ্যবর্তী সামুদ্রিক এলাকা

বিস্তীর্ণ তেল ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এসেকুইবো অঞ্চলের সামুদ্রিক এলাকায় গত কয়েক মাসে দুই প্রতিবেশি দেশের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই সামুদ্রিক এলাকায় নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ভেনেজুয়েলা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে বলছে, পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণের সময় তুলনামূলক কম জনবহুল ওই অঞ্চলটিতে প্রতারণার শিকার হয়েছে তারা। যদিও উপকূলীয় ওই অঞ্চলটি অনুন্নত ঘন জঙ্গল। গত কয়েক বছরে ওই অঞ্চলের কাছাকাছি অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডারের সন্ধান মিলেছে; যা গায়ানাকে বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মানচিত্রে স্থান দিয়েছে।

 

• দক্ষিণ চীন সাগর

চীন, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করছে। প্রতি বছর ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য পরিবহন করা হয় এই সমুদ্রপথ দিয়ে। যে কারণে এসব দেশের সরকার বিতর্কিত এই জলসীমায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া।

 

• ওমান উপসাগর

কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক স্তরে আবারও আলোচনায় আসে ওমান উপসাগর। ওই সময় ইরানের নৌবাহিনী ১৯ জন ক্রু সদস্যসহ একটি তেল ট্যাংকার আটক করে।

 

যুক্তরাজ্যের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেটিএমও) ওই ঘটনাটি ওমানের উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে ঘটেছে বলে জানিয়েছিল। এই অঞ্চলটি পারস্য উপসাগরের সরু মুখ হরমুজ প্রণালীর ভেতরে এবং বাইরে চলাচল করা জাহাজের অন্যতম পথ; যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট তেল বাণিজ্যের প্রায় এক পঞ্চমাংশই পরিবহন করা হয়।

সূত্র: মেট্রো ডট ইউকে।

Side banner