ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখকে ঘিরে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখকে ঘিরে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। দেশ জুড়ে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। বাঙালির প্রাণের এ উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীরা। দিনরাত তৈরি করে যাচ্ছেন মাটির খেলনাগুলো। শেষ মুহূর্তে রং-তুলির আঁচড়ে ভরে উঠছে বাহারি রকমের মাটির তৈজসপত্র। 


প্রযুক্তি, রুচি, আধুনিকতা ও বাজার বিশ্বায়নের ফলে বাঙালির সংস্কৃতির অংশ মৃৎশিল্প এখন উৎখাত হওয়ার পথে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এই পেশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। তার ওপর আবার গেল অতিমারি করোনা মৃতশিল্পকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। 


সবমিলিয়ে ভাল নেই মৃৎশিল্পীরা। তবু শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে এ জেলার যে কজন এখনও শিল্পটিকে ধরে রেখেছেন তারা বাঙালির উৎসব বৈশাখ উপলক্ষে মাটির পণ্য প্রস্তুত করছেন। তবে বৈশাখে রোজা আর সামনে ঈদ আবার মন্দাও রয়েছে। এর মধ্যে মাটির এসব জিনিস পত্র কতটুকু কাটবে তা নিয়েও শিল্পীদের মধ্যে বেশ শংঙ্কা আছে। 


স্থানীয়রা বলছেন, শিল্পের আগ্রাসনে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্লাস্টিক আর মেটাল দ্রব্যের ছড়াছড়ি থাকলেও মাটির তৈরি তৈজসপত্র হারিয়ে যায়নি একেবারে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ব্যবহার কম হলেও মাটির তৈরির তৈজসপত্রের প্রয়োজনীয়তা গ্রামীণ পরিবারে রয়ে গেছে এখনো। এছাড়া শহরে পরিবারেও ঘর সাজানোর সামাগ্রী হিসেবে বেশ চাহিদা রয়েছে মাটির তৈরি নানা জিনিসপত্রের। আর এ কারণেই এখনো টিকে রয়েছে গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য। 


এ পেশায় জড়িতরা জানান, এক সময় পাইকাররা বৈশাখের আগে আমাদের এখানে ভিড় করতেন। এখন আর পাইকার আসেন না। নিজেরাই তৈরি করি আবার ফেরি করে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করছি।


আরও জানান, পালপাড়ায় এমন দুরবস্থা হবে কোনো দিন কল্পনা করেননি। এখন চাহিদা মতো আঠাল মাটি পাওয়া যায় না। দূরের গ্রাম থেকে মাটি আনতে হয়। মাটির অনেক দাম, শ্রমিক ও লাড়কির দামও বেড়েছে। ফলে পুরাতন এই পেশা ত্যাগ করেছেন অনেকে। 


রান্নার কাজে ব্যবহৃত মাটির হাঁড়ি, মাটির থালা, কলসি, বাটি, হাতি, ঘোড়া, মাছ, পুতুল, ব্যাংকসহ নানা রকম মাটির তৈজসপত্র বৃদ্ধি করে বৈশাখী মেলার সৌন্দর্য। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মেলার এই সৌন্দর্য। প্লাস্টিক আর মেটাল দ্রব্যের ভীড়ে স্বল্প মাটির জিনিসপত্র বিক্রিতে পেট চলে না পালদের। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাপ-দাাদার পুরনো এ পেশা বদলাতে হচ্ছে অনেকের। তবে কাজের সঠিক মূল্যায়ন ও সরকারি-বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব এই শিল্পের সোনালি অতীত ফিরবে বলে প্রত্যাশা লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীদের।

Side banner