ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা এখন গাজা, লেবানন, ইরান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলার পর নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তুরস্কে। আঙ্কারার কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য কি তবে তুরস্ক? বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া ইসরায়েল ন্যাটো সদস্যপদকেও তোয়াক্কা নাও করতে পারে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা ইতোমধ্যেই সতর্ক করে বলেছেন, তুরস্কের বিরুদ্ধে হামলার চিন্তাই ইসরায়েলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। গত আগস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে আঙ্কারা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এটি কেবল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও। অন্যদিকে ইসরায়েলি গণমাধ্যম তুরস্ককে ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে উল্লেখ করছে, বিশেষ করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আঙ্কারার ভূমিকা ও সিরিয়ার পুনর্গঠনে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে।
কাতারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা ন্যাটোর প্রতি আস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তুরস্কে। গবেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের নির্লিপ্ততা ইসরায়েলকে আরও সাহস জুগিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আঙ্কারা বুঝতে পারছে, কেবল ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্য তুরস্কের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। আঙ্কারার মতে, এ ধারণা শুধু প্রতীকী নয়, বরং সরাসরি আঞ্চলিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থের হুমকি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও বলেছেন, এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো—এলাকার দেশগুলোকে দুর্বল ও বিভক্ত রাখা।
সব মিলিয়ে ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন এবং তুরস্কের পাল্টা প্রতিরোধ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষের ঝুঁকি এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :