ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দুরভ কেন দুবাই বাস করেন?

ভোরের মালঞ্চ | অনলাইন ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দুরভ কেন দুবাই বাস করেন?

বার্তা আদান–প্রদানের জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পাভেল দুরভ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ধনী তালিকায় ১১৮ তম স্থানে রয়েছেন। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের তথ্য মতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭ দশমিক ১ বিলিয়ন। বর্তমানে ৪০ বছর বয়সী রুশ বংশোদ্ভূত এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বসবাস করেন দুবাইয়ে।

 

দুবাইকে প্রায়ই বিশ্বের শপিং ও লাক্সারি রাজধানী বলা হয়, এবং এটি বিশ্বের ধনী বিলিয়নিয়ারদের আবাসস্থলও। ২০২১ সালের ফোর্বসের একটি প্রতিবেদন দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তাদের মতে, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১১ জন বিলিয়নিয়ার আছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য কোনো দেশের তুলনায় বেশি।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অনান্য বিলিয়নয়রদের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী পাভেল দুরভ কেন এখানে বসবাস করেন।

 

পাভেল দুরভ কে?

 

১৯৮৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চার বছর বয়সে তার পরিবার ইতালি চলে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তার পরিবার রাশিয়ায় ফিরে আসে। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ফিলোলজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

মাত্র ২২ বছর বয়সে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ সামাজিক নেটওয়ার্ক ‘ভিকন্তাক্তে’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার অসাধারণ নেতৃত্বে ব্যবহারকারী সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টি তাকে ‘রাশিয়ার জাকারবার্গ’ হিসেবে পরিচিত করেছিল।

 

তবে, মস্কোর গোপন সংস্থার সঙ্গে কাজ না করার কারণে তার জীবন নাটকীয় মোড় নেয়। ব্যবহারকারীর তথ্য সরবরাহ করতে অস্বীকার করার পর, তাকে প্রতিষ্ঠানটির অংশ বিক্রি করে রাশিয়া ত্যাগ করতে হয়। রাশিয়া ছাড়াও ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সর্বশেষ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পান পাভেল। তবে বর্তমানে দুবাইতে থাকেন।

 

যেভাবে টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা:

 

২০১৩ সালে পাভেল দুরভ টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি বিনামূল্যে ব্যবহৃত এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ। খুব দ্রুতই হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জন করায় বর্তমানে ১০০ কোটির বেশি মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রযুক্তি জায়ান্টের মতো নয়, টেলিগ্রাম এখনও পুরোপুরি দুরভের মালিকানায় রয়েছে, আর এটিই তার মূল সম্পদের উৎস।

 

এক্সে (সাবেক টুইটার) সম্প্রতি পাভেলের এক ভিডিও সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, মাত্র ৩০ জন প্রকৌশলী নিয়ে টেলিগ্রাম চালাচ্ছেন।

 

কেন দুবাইতে বসবাস?

বিভিন্ন দেশে অবস্থানের পর ২০১৭ সালে দুবাইয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর সুবিধা ও বহুসংস্কৃতির জীবনধারা তাকে আকর্ষণ করেছিল। সেখানে নাগরিকত্বও নেন। অন্য বিলিয়নিয়ারদের মতো তিনিও যথেষ্ট বিলাসী জীবন যাপন করেন। বর্তমানে তিনি জুমাইরা আইল্যান্ডসে ১৫ হাজার বর্গফুটের পাঁচ বেডরুম বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন। দেশটি শুধু বিশ্বব্যাপী ব্যবসার নিরাপদ জায়গা নয়, বরং বিলিয়নিয়ারদের জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই জীবনধারার সুবিধাও দিয়ে থাকে।

 

তার অর্জন ও সফলতা:

পাভেল দুরভের ক্যারিয়ারে বহুবার নানা বিতর্কের সঙ্গী হয়েছেন, তবে প্রযুক্তি জগতে তার প্রভাব অস্বীকার করার মতো নয়। এক্স হ্যান্ডেলে ২৬ লাখ এবং ইনস্টাগ্রামে ১৬ লাখ অনুসারী রয়েছেন। তার বায়োতে লেখা আছে—
‘প্রতিষ্ঠাতা, সিইও টেলিগ্রাম (২০১৩), প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সিইও ভিকন্তাক্তে (২০০৬), পার্ট-টাইম ট্রল’।

 

তিনি শুধুমাত্র দুবাইয়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নন— প্রযুক্তি স্বাধীনতা, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে সংঘাতের প্রতীক। তার গল্প হলো দৃঢ়তা, প্রতিবাদ, এবং ডিজিটাল স্বাধীনতার অন্বেষণের গল্প।

 

তথ্য সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Side banner